শিব পুরাণে রুদ্রাক্ষের ( Which Rudraksha Is Best In Bengali ) জন্মকথা সম্বন্ধে বলা আছে যে, নিধন করার জন্য শিবকে অনেক বছর যাবৎ সংগ্রাম করতে হয়। সেই যুদ্ধে ব্যস্ত থাকার সময় কোন কারণে ই যে, হিমালয়ে বিচরণরত ক্ষত্রিয় রাক্ষস ত্রিপুরাসুরকে শিবের চোখে আঘাত লাগে, তার ফলে শিবের চোখ থেকে অশ্রু জল পতিত হতে থাকে। তাই দেখে পদ্মযোনি ব্রহ্মা সেই অশ্রু জলকে বৃক্ষে পরিণত হওয়ার আদেশ দেন। তারপর সেই বৃক্ষটি বড় হলে তার ফুল ও ফল হতে থাকে। সেই ফলের নামই রুদ্রাক্ষ।
যে সকল রুদ্রাক্ষ পাওয়া যায় তাদের মধ্যে-
(১) আমলকী আকারের রুদ্রাক্ষই সর্ব্বত্তমো।
(২) কুলের আকারের রুদ্রাক্ষ মধ্যম শ্রেণীর।
(৩) ছোলার আকারের ছোট রুদ্রাক্ষ নিম্নস্তরের।
রুদ্রাক্ষের লক্ষণ: যে রুদ্রাক্ষ সর্ব্বদিকে সমান, কোথাও আঁকা-বাঁকা, উঁচু-নীচু বা ভাঙ্গা চোরা নেই,
সেই রুদ্রাক্ষই সবথেকে ভাল। এর ধারগুলো বেশ স্পষ্ট থাকে আর গায়ের কাঁটা কাঁটা দাগগুলি বাইরে বেরিয়ে থাকে। যে রুদ্রাক্ষ জলে ডুবে যায়, দুটো তামার টুকরোর মধ্যে রাখলে ঘুরতে থাকে। তেমন ছিদ্রাযুক্ত নয়, উজ্জ্বল ও ভারি হয়, এমন রুদ্রাক্ষই সবচেয়ে ভাল। একে সর্ব্বোত্তম বলে মানা হয়। এই রুদ্রাক্ষগুলোই সবচেয়ে বেশি উপকারী এ-কথা জোর দিয়ে বলা যায়। ভাল লক্ষণযুক্ত রুদ্রাক্ষ উজ্জ্বল ও ভারী হয়।
একমুখী রুদ্রাক্ষ: একমুখী রুদ্রাক্ষের মধ্যে অনেক দৈবশক্তি থাকে। একমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণে অনেক প্রকার বাধা-বিপত্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, শুধু তাই নয় ভগবান শিবের প্রতি বিশেষ ভক্তি প্রদর্শিত হয় এবং ইহাতে আধ্যাত্মিক উন্নতিও ঘটে। তাই একমুখী রুদ্রাক্ষ সকলের সেরা। একে গোল আকারের দেখা যায়। আবার গোলাকার ছাড়াও অর্ধচন্দ্রাকৃতি আকারেও দেখা যায়। একমুখী রুদ্রাক্ষ। করলে বৈষয়িক লাভ বেশি পাওয়া যায়।
দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ: এটি দেখতে প্রায় চ্যাপ্টা ধরণের। এতে সমৃদ্ধি আর সুরক্ষার শক্তি বেশী পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। এই রুদ্রাক্ষ ধারণকারীকে কেউ বশ করতে পারে না। দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ স্ত্রী-লোকদের ক্ষেত্রে পরম উপকারী। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে অনেক অসাদ্ধও সাদ্ধ হয়ে থাকে।
ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষর: বর্তমানে চিকিৎসকরাও স্বীকার করছেন যে ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে সঙ্গে সঙ্গে জ্বর উপশম হয়। ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষে ত্রিরত্ন-ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, ত্রিগুণ-সত্ত্ব, রজঃ, তমোঃ, আর ত্রিলোক-আকাশ, মর্ত্য ও পাতালের যাবতীয় উপশক্তি নিহিত থাকে। যার জন্য তিনমুখী রুদ্রাক্ষ সর্ব্বোত্তম ও দৈবিক ক্ষমতাসম্পন্ন।
চতুর্মুখী রুদ্রাক্ষ: ব্রহ্মার প্রভাবেই চারমুখী রুদ্রাক্ষের উৎপত্তি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মন বসাতে বিশেষ ফলদায়ক হয়। এই রুদ্রাক্ষের দ্বারা বাস্তব জীবনে শ্রীবৃদ্ধি লাভ হয়ে থাকে। এই রুদ্রাক্ষের মালা গলায় ধারণকালে কোন শত্রু ক্ষতি কতে পারে না।
পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ: পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ শান্তিপ্রদানকারী এবং পাপনাশক। এর দ্বারা মানুষের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। এই রুদ্রাক্ষ একসঙ্গে তিনটি ধারণ করতে হয়, তিনটি ধারণ করলে সর্ব্ব মনোস্কামনা পূরণ হয়।
ষষ্ঠমুখী রুদ্রাক্ষ: ষষ্ঠমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে বিদ্যা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের ফল প্রকাশ পায়। যে কোন কঠিন বিপদ থেকে তিনি রক্ষা পাবেন। এই রুদ্রাক্ষ গলায় ধারণ করলে ভীষণভাবে মেধার বৃদ্ধি হয়।
সপ্তমুখী রুদ্রাক্ষ: সপ্তমুখী রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ কামরূপ। ইহা রোগ নিবারক ও সমৃদ্ধিশালী। এই রুদ্রাক্ষ মণিবন্ধনে ধারণ করলে সুফল পাওয়া যায়।
দশমুখী রুদ্রাক্ষ: এই রুদ্রাক্ষ সকল মানুষের কামনা পূরণ করে। এই রুদ্রাক্ষ বিপদনাশ ও রোগব্যাধি নিবারণ করে। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে ধারণকারী বাক্সিদ্ধ হয়ে থাকে।
একাদশমুখী রুদ্রাক্ষ: স্বয়ং রুদ্রাক্ষই একাদশমুখী রুদ্রাক্ষ। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে গোদান, ব্রাহ্মণ ভোজন ও দেবসেবার ফল পাওয়া যায়। ধারণকারী সর্বত্র বিজয় প্রাপ্ত হন।
দ্বাদশমুখী রুদ্রাক্ষ: এই রুদ্রাক্ষ সহজে পাওয়া যায় না। যদি ভাগ্যক্রমে ধারণ করা হয় তাহলে ধারণকারীর কোন রোগ, চিন্তা, শোক আর ভয় থাকে না। কোন শত্রু দ্বারা তিনি আক্রান্ত হন না। কোন ব্যক্তি গোপনে তাঁর সর্বনাশ করার চেষ্টা করলেও পারবে না। বরঞ্চ সেই ব্যক্তির সর্বনাশ হয়। এই দ্বাদশমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণকারীর জ্ঞান ও ধনবৈভব বৃদ্ধি পায়।
চতুৰ্দ্দশমুখী রুদ্রাক্ষ: রুদ্রদেবের চোখ থেকে চতুৰ্দ্দশমুখী রুদ্রাক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এর গুণের পরিসীমা নেই। এই রুদ্রাক্ষ ধারণকারী সর্ব্বস্থানে মান-সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভ করে। এই রুদ্রাক্ষকে পূজা করলে বা ধারণ করলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
(যে সমস্ত রুদ্রাক্ষের কথা উপরে বলা হয় নাই তাহা খুবই দুর্লভ)।