বিশ্বাস অনুসারে প্রতি শনিবার ( শনিদেবের ব্রতকথা। Shanidev Broto Katha ) নিজেকে ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে দূরে রাখতে এবং জীবনের কষ্ট কমাতে ভগবান শনির উপাসনা করা উচিত কারণ তিনি তাদের আশীর্বাদ করেন যারা বিনিময়ে কিছু না চেয়ে স্বেচ্ছায় দরিদ্রদের দান করেন।
কুপ্রভাব থেকে মুক্তি পেতে শনিবার শনিদেবের ব্রত পালন করুন, এদিন ভক্তরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস করেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে শরীরে তিলের তেল মেখে স্নান করুন। স্নান করার পর সারাদিন কালো কাপড় পরিধান করা শুভ বলে মনে করা হয়। সন্ধ্যেবেলা তিলের তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালান। চলুন জেনে নেওয়া যাক শনিবার শনিদেবের ব্রতের নিয়ম
শনিবার শনিদেবের ব্রতকথা । Shanidev Broto Katha
শনিবার সন্ধ্যাকালে ঘরের বাহিরে উঠানে এই ব্রত করিতে হয়। ইহাতে সত্যনারায়ণ পূজার ন্যায় সিন্নি দেওয়া হয়। সারাদিন উপবাসী থাকিয়া সন্ধ্যায় শনিদেবের পুজার শেষে ব্রতকথা শুনিয়া নির্মাল্য প্রসাদ গ্রহণ করিবেন।
ব্রতের উপকরণ – উৎকৃষ্ট ফল ৫টি, পান, সুপারী, কালোপাড় ধুতি, লোহার আসনাঙ্গুরীয়, মধুপর্কের বাটি, মাষকলাই, কালো তিল, নীল অপরাজিতা ফুল, নৈবেদ্য, মিষ্টান্ন, ধূপ-দীপ, সিন্নির জন্য-আটা, দুগ্ধ, গুড়, কলা, বাতাসা, কালো মাটির ঘট বা লোহার ঘট, পুষ্প, গঙ্গাজল ও গঙ্গামৃত্তিকা ইত্যাদি।
ব্রতের ফল – এই ব্রত করিলে শনিদেব সুপ্রসন্ন হন। সংসারে আপদ-বিপদ, দুঃখ-কষ্ট দূর হইয়া সংসার শান্তিময় হয়। শনিদেবের কৃপায় সর্বপ্রকার গ্রহদোষ কাটিয়া যায়।
পূজাবিধি – আচমনাদি সমাপন করিয়া স্বস্তি বাচন ও সঙ্কল্প করিয়া গণেশাদি পঞ্চদেবতার পূজান্তে যথাবিধি ঘটস্থাপনাদি করিয়া শনিদেবের ধ্যানান্তে যথাশক্তি উপচারে পূজা করিবেন।
ধ্যান – ওঁ সৌরাষ্ট্রং কাশ্যপং শূদ্রং সূৰ্য্যাস্যং চতুরঙ্গুলম্। কৃষ্ণং কৃষ্ণাম্বরং গৃঃগতং সৌরিং চতুর্ভুজম্। উদ্ববাণং শূলং ধনুর্হস্তং সমাহয়েৎ। যমাধিদৈবতং দেবং প্রজাপতি প্রত্যধিদৈবতম্।
পূজামন্ত্র – ওঁ ঐং হ্রীং শ্রীং শনৈশ্চরায় নমঃ।
প্রণাম মন্ত্র – ওঁ নীলাঞ্জনচয়ং প্রখ্যং রবিসূতং মহাগ্রহম্। ছায়ায়া গর্ভসম্ভূতং বন্দে ভক্ত্যা শনৈশ্চরম্। অতঃপর নবগ্রহ, দশদিকপাল, ছায়া, সবর্ণা, কালী, শিব, যম ও প্রজাপতির পূজা করিয়া পরে শনির পঞ্চোপচারে পূজা করিবেন। শেষে – ‘ওঁ গৃধ্রায় নমঃ’ মন্ত্রে গৃধ্রা পূজা করিবেন।
শনিদেবের ব্রতকথা -
শ্রীহরি নামেতে এক ছিল যে ব্রাহ্মণ। নিত্য ভিক্ষা করি করে উদর পূরণ।।
দিবা রাত্র কৃষ্ণনাম জপে অকপটে। অন্তরে সদাই সুখী অন্ন নাহি পেটে।।
হেনকালে তার এক পুত্র জনমিল। পুত্র মুখ দেখি দ্বিজ বিবাদে ভাসিল।।
ভিক্ষা করি দ্বিজসেবা পুত্র রক্ষা করে। সুমঙ্গল বলি নাম রাখিল পুত্রেরে।।
অত্যন্ত মেধাবী পুত্র সবে গুণ গায়। অল্পদিন মধ্যে শিশু শিখে সমুদয়।।
শাস্ত্র আলোচনা করি শাস্ত্রজ্ঞ হইল। পণ্ডিত বলিয়া তারে সকলে জানিল।।
মনে মনে সুমঙ্গল হরিকে ডাকিল। গৃহ ছাড়ি নানা তীর্থে ঘুরিতে লাগিল।।
আচম্বিতে এক স্থানে করিল শ্রবণ। পিতা-মাতা পরলোকে করেছে গমন।।
শুনি তাহা গয়াধামে করিয়া গমন। বিষ্ণুপাদ-পদ্মে শিশু করিল অর্পণ।।
কালবশে ঘটে যাহা কে করে খণ্ডন। শনির দৃষ্টিতে পড়ে দ্বিজের নন্দন।।
ভ্রমিতে ভ্রমিতে দ্বিজ যায় বহুদূরে।শেষে উপস্থিত হয় বিদর্ভ নগরে।।
রাজার সভায় দ্বিজ উপস্থিত হৈল। ব্রাহ্মণ দেখিয়া রাজা অভ্যর্থনা কৈল।।
রাজার নিকটে দ্বিজ দেয় পরিচয়। সুমঙ্গল নাম মোর ওহে মহাশয়।।
অতি দুঃখী হই আমি নাহি পিতা-মাতা। নানা দেশ ভ্রমি আমি থাকি যথা তথা।।
শ্রীবৎস রাজন বলে, চিন্তা দূর কর। আমার আশ্রয়ে থাকি মোরে কৃপা কর।।
শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত তুমি বুঝি অনুমানে। শাস্ত্রপাঠে তুষ্ট কর কর সভাসদগণে।।
দুই পুত্র আছে মোর শুন'হে ব্রাহ্মণ। তব কাছে পড়াইবো করিয়াছি মন।।
রাজার বাক্যেতে দ্বিজ সন্তুষ্ট হইল। রাজার আশ্রয়ে বাস করিতে লাগিল।।
দুই রাজপুত্রে দ্বিজ অতি যত্ন করে। নিত্যই পড়ায় দ্বিজ রাজার কুমারে।।
এইরূপে কিছুদিন বিগত হইল। পড়ুয়া বেশেতে শনি উপস্থিত হইল।।
শনিরে জিজ্ঞাসে দ্বিজ, শুন বাছাধন। কিবা হেতু হেথা তব হয় আগমন।।
শনি বলে, এনু শাস্ত্র অধ্যয়ন তরে। দ্বিজ বলে, যত্ন করি পড়াব তোমারে।।
অল্পদিন মধ্যে শনি সুপণ্ডিত হৈল। সুমঙ্গল পরিচয় জানিতে চাহিল।।
শনি বলে, পরিচয় কিবা দিব আর। শনৈশ্চর নাম মোর সূর্যের কুমার।।
সুমঙ্গল বলে যদি দেখা দিলে মোরে। কিসে দুঃখ দূরে যাবে বল হে আমারে।।
আমার উপরে আছে তোমার কটাক্ষ। কিসে যাবে বল প্রভু হইয়া 'স্বপক্ষ।।
শনি বলে, ভোগকাল ছয়মাস আছে। দশদণ্ড মধ্যে যাবে না আসিবে কাছে।।
সপ্তম দিবসে গিয়া ভগীরথী তীরে। একান্ত মনেতে দ্বিজ ভজ মুরারীরে।।
এত বলি শনিদেব অন্তর্ধান হৈল। সুমঙ্গল আর তার দেখা না পাইল।।
শনি আজ্ঞামত দ্বিজ গিয়া গঙ্গাতীরে। নারায়ণে ভজে দ্বিজ একান্ত অন্তরে।।
দশদণ্ড পূর্ণ হৈল মনেতে বিচারি। উঠি দাঁড়াইল দ্বিজ বলিয়া শ্রীহরি।।
কিন্তু দশদণ্ড পূর্ণ না হয় তখন। তার পূর্বে চলে আসে আপন ভবন।।
তাহা দেখি শনিদেব কুপিত হইল। দুই রাজপুত্রে শনি হরণ করিল।।
পুনঃ মায়া বলে দুই শিশু মুণ্ড গড়ি। দ্বিজের নিকটে শনি যান তাড়াতাড়ি ।।
হেথা দ্বিজ চক্ষু বুজি শ্রীহরিরে স্মরে। মুণ্ড দুটি ফেলে তার উরুর উপরে।।
হেথা নিদ্রা যোগে রাজা দুঃস্বপ্ন দেখিল। পাত্রমিত্র লয়ে রাজা গঙ্গাতীরে গেল।।
দেখিয়া দ্বিজের কোলে পুত্র মুণ্ডদ্ধয়। হাহাকার করি রাজা ধূলায় লুটায়।।
রাজাদেশে দূতগণ বাঁধে ব্রহ্মাণেরে। শৃঙ্খলে বন্ধন করি রাখে কারাগারে।।
কারাগারে বসি দ্বিজ কাঁদিতে লাগিল। বিপদহন্তা মধুসূদনে স্মরিতে লাগিল।।
অতঃপর ঘটে এক বিচিত্র ঘটন। দশদণ্ড বেলা পূর্ণ হইল যখন।।
শোকেতে কাতর রাজা ছিলেন যেখানে। হেনকালে দুই পুত্র আসিল সেখানে।।
রাজা বলে, কোথা ছিলে হৃদয়ের ধন। শয্যা পরে ছিনু পিতা করিয়া শয়ন।।
পুত্রদের বাক্যে রাজা আশ্চর্য হইল। আদ্য অন্ত কিছু তার বুঝিতে নারিল।।
ব্রাহ্মণের কথা এবে পড়ে গেল মনে। না বুঝিয়া কত কষ্ট দিনু সে ব্রাহ্মণে।।
রাজাদেশে দূত গিয়া আনিল বিপ্রেরে। জীর্ণশীর্ণ কলেবর কাঁদেন কাতরে।।
বিনয় বচনে রাজা করে তার স্তুতি। সব অপরাধ ক্ষমা কর মহামতি।।
কৃপা করি কর মোর সন্দেহ ভঞ্জন। তব ক্রোড়ে কার মুন্ড করেছি দর্শন।।
দ্বিজ বলে, মহারাজ কিছুই না জানি। শনি কোপে কষ্ট পাই এইমাত্র মানি।।
রাজা বলে, যদি পাই শনি-দরশন। ষোড়শোপচারে তাঁর করিব পূজন।।
নৃপবাক্য শুনি দ্বিজ করিল গমন। শনির নিকটে সব করে নিদেবন।।
শুনিয়া সকল কথা শনিদেব এল। শনিদেবে দেখি রাজা প্রণাম করিল।।
রাজা বলে যদি প্রভু এলে কৃপা করে। পূজার বিধান তবে বল প্রভু মোরে।।
শনি বলে, পূজাবিধি শুনহে রাজন। যেরূপে করিবে মোর পূজা আয়োজন।।
শুদ্ধভাবে শুদ্ধমনে আমার বারেতে। করিবে আমার পূজা একান্ত মনেতে।।
নীলবস্ত্র কৃষ্ণতিল আর তৈল দিবে। মাষকলাই আর মোষ সংগ্রহ করিবে।।
কৃষ্ণবর্ণ ঘট এক করিয়া স্থাপন। পঞ্চজাতি ফল-ফুলে করিবে অর্চন।।
এই মোর পূজাবিধি কহিলাম সার। ভক্তিই প্রধান জেনো কি কহিব আর।।
পূজা-শেষে ভক্তিভরে করিবে প্রণাম। নবগ্রহ স্তোত্র পাঠে লইবেক নাম।।
আমার প্রসাদ যাবে করিয়া যতন। সর্বপাপ দূরে যাবে আমার বচন।।
অভক্তি করিয়া যেবা প্রসাদ খাইবে। অল্পদিনে শমনের ভবনে সে যাবে।।
আমার পূজায় যেবা করে অনাদর। চিরকাল দূঃখ পেয়ে হইবে কাতর।।
এত বলি শনিদেব হ'ন অদর্শন। ভক্তিভরে করে রাজা শনির পূজন।।
প্রতি শনিবারে পূজা করে নৃপবর। বিপ্রগণে দান দিয়া তুষিল বিস্তর।।
নৃপ-পাশে সুমঙ্গল বিদায় লইয়া। শনিদেবে পূজা করে। গঙ্গাতীরে গিয়া।।
এইরূপে পূজা প্রচারিল শনিদেবে নাহার যেমন সাধ্য সে ভাবে পূজিবে।।
শনির মাহাত্ম্য যত কে বর্ণিতে পারে। কিঞ্চিৎ রচিত হৈল শনিদেবের বরে।।
সর্বদা শনির পদ থাকে যার মনে। উদ্ধারে বিপদ হতে পড়িলে শমনে।।
শনির পাঁচালী যেবা রাখিবে ভবনে। কখনও না পড়ে সে বিপদ বন্ধনে।।
শনি প্রণমিয়া যেবা নিজ কার্য্যে যায়। সমাদর করে তারে রাজার সভায়।।
স্কন্দ পুরাণের কথা অন্যথা না হয়। যথাবিধি ব্যাসবাক্য কহু মিথ্যা নয়।।
শুদ্ধাশুদ্ধ জ্ঞানহীন বলে নিবারণ। ভূমিতে লুটিয়া বন্দি শনির চরণ।।
এতদূরে এই গ্রন্থ সমাপন করি। শনৈশ্চর প্রীতে সবে বল হরি হরি।।
-অথ শনিদেবের ব্রতকথা সমাপ্ত-
উপসংহার – আশা করি আপনি আজকের পোস্ট থেকে উপকৃত হয়েছেন। শ্রী শনি দেব এর কৃপায় আপনার জীবনের সমস্ত কষ্টের অবসান হোক। আপনি যদি ভগবান শ্রী শনি দেব এর উপাসনা করেন তবে আপনার জীবনের সমস্ত বাধা বিপত্তি দূর হয়, আপনার সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হয়। আপনি যদি এই নিবন্ধটি থেকে উপকৃত হন, একটি মন্তব্য রেখে আমাদের উত্সাহিত করুন।
আরো তথ্য জানতে ক্লিক করুন এখানে
আরো পড়ুন
- 2025 Sawan Somwar Vrat In Hindi। श्रावण सोमवार व्रत कब से शुरू – जानें सारी जानकारी
- 2025 Srabon Somvar Vrat In bengali । শ্রাবণ সোমবার ব্রত কবে থেকে শুরু – জেনে নিন সব তথ্য
- আদ্যা স্তোত্র । Adya Stotram In Bengali PDF [ FREE Download ]
- Rath Yatra 2025 Kab Hai | रथ यात्रा २०२५
- Nil Sasthi 2025 | নীল ষষ্ঠী ২০২৫ কবে – নীল ষষ্ঠীর ব্রতকথা
- সম্পূর্ণ সরস্বতী পূজা পদ্ধতি । Saraswati Puja Paddhati In Bengali PDF
- Saraswati Puja 2025 Date | সরস্বতী পূজা 2025 কবে | সরস্বতী পূজা পদ্ধতি PDF
- Navgrah Chalisa Lyrics In English PDF
- Navgrah Chalisa In Hindi PDF | नवग्रह चालीसा हिन्दी में पढ़ें
- Shukrawar Santoshi Mata Vrat & Katha – माँ संतोषी व्रत और कथा
- Sita Ram Sita Ram Bhajan Lyrics Hindi | सीता राम सीता राम भजन लिरिक्स हिंदी
- रामायण चौपाई | Ramayan Choupai In Hindi
Very nice..keep it up..
Thank you so much